Sunday, April 13, 2025

ঘুষের টাকা পকেটে নিয়ে এসআই মাহফুজুর বলেন ‘গুনে নেওয়া সুন্নত’

আরও পড়ুন

সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে একটি দোকানে এসআই মাহফুজুর রহমানকে সাদা পোশাকে ঘুষের টাকা গুনে নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, একটি দোকানে সাদা পোশাকে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানায় কর্মরত এসআই মাহফুজুর রহমান একটি চেয়ারে খোশ মেজাজে বসে একজনকে বলছেন, ‘১০ হাজার টাকা কইছি।’ সামনে বসে থাকা এক ব্যক্তি বলছেন, ‘সবুরে মেওয়া ফলে।’

এ সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তা তার দিকে মনোযোগ দিয়ে আঙুল উঁচিয়ে বলেন, ‘এক টাকাও কম হইতো ন।

সামনে বসে থাকা ওই ব্যক্তি বলেন, ‘বস, একটু বসেন।’ মাহফুজুর তখন মুচকি হাসেন। মুখে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলেন, ‘কাম শেষ, এখন টিয়া।’ তখন আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘মাহফুজ ভাই, আসলে যে মুরব্বি, সে মুরব্বি বেকার মানুষ তো জানেন, বোঝেন।

আরও পড়ুনঃ  শাবি: বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে নয়, নিজের টাকায় ইফতার করা যাবে

’ এ সময় এসআই মাহফুজ মুচকি হেসে বলেন, ‘বেকার না আকার আকার।’ তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘যা-ই হোক ওনার ছেলে-মেয়ে বাদ, উনি বেকার মানুষ। উনি আগে ড্রেজার ব্যবসা-টেবসা করত। অনেকের কাছে টাকা-টোকা পাওনা ছিল, অনেকে দিলে.. এর আগে যাই দিছি দেখছেননি।

তিনি আরো বলেন, ‘ওনারে একজন দিয়ে গেছে, ওনার আবার ওষুধ-টষুধ কিনা লাগে, এরপর এই ঝামেলা লাগি গেছে।’ এ সময় মাহফুজ মিন মিন করে বলছেন, ‘দেন দেন।’ এ সময় প্রথম ব্যক্তি বলছেন, ‘গরিব মাইনসোগো লাগি একটু দিলটা নরম করেন। যেডিন ঝামেলা আছে…’

এরপর এসআই মাহফুজুর আরেক ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে দ্বিতীয় ব্যক্তির দিকে হাত এগিয়ে দিলে দ্বিতীয় ব্যক্তি মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে তার হাতে দেন। ওই ব্যক্তি টাকা দিতে দিতে বলেন, ‘আমি না পারতে এ পর্যন্ত আসলাম।

আরও পড়ুনঃ  সব শালারা বাটপার’ স্লোগানে উপদেষ্টা নাহিদকে ইঙ্গিত করা হয়নি

বিশ্বাস করেন! আমি আরেক দিন এসে ডিটেইলস বলব, তখন বুঝবেন। না হলে আমি আপনার কাছে আসতাম না, যদি অফিশিয়ালি সলিউশন করতে পারতাম আমি।’ এ সময় প্রথম ব্যক্তি বলে ওঠেন, ‘গইন্নেননা, গইন্নেননা।’

তখন মাহফুজ বলেন, ‘টাকা গুনে নেওয়া সুন্নত।’ প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘রুম অন্ধকার, আল্লাহ কইছে মাইনসেরে দেহাই কিল্লাই।’ এ সময় মাহফুজ মুচকি হাসতে হাসতে টাকা গোনেন কয়েকবার। এরপর দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘চা খাবেন?’ মাহফুজ প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘পরে খাব।’ এরপর টাকা হাতের মুঠে নিয়ে বের হয়ে যান।

এদিকে, ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করে এসআই মাহফুজুর জানান, এটি তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র। তবে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমানের সামনে ফুটেজ উপস্থাপন করা হলে চুপসে যান তিনি

আরও পড়ুনঃ  ভারতকে বাংলাদেশের কাছে স্পষ্ট ভাষায় ক্ষমা চাইতে হবে : ইউনুছ আহমাদ

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানায় কর্মরত অবস্থায় বিভিন্নজনকে রাজনৈতিক মামলায় ফেলে মোটা অঙ্কের ঘুষবাণিজ্য করেন মাহফুজুর রহমান। কিন্তু ওই থানা থেকে হাজীগঞ্জে এসেও পুরনো স্বভাব পরিবর্তন করেননি তিনি।

আজ সোমবার (১১ নভেম্বর) সকালে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব জানান, ভিডিও ফুটেজ দেখে এরই মধ্যে এসআই মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাকে হাজীগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহার করে চাঁদপুর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া বিভাগীয় ব্যবস্থা হিসেবে জ্যেষ্ঠ একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত শুরু করা হচ্ছে।

গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ফরিদগঞ্জ থানা থেকে হাজীগঞ্জ থানায় বদলি করা হয় এসএই মাহফুজুর রহমানকে। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ