Saturday, April 19, 2025

বিনা*বিচারে ৬ বছর জেলে মানারাতের দুই ছাত্রী

আরও পড়ুন

জেএমবি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে পুলিশের সাজানো মামলায় গত ৬ বছর ধরে বিনাবিচারে নরসিংদী কারাগারে বন্দি রয়েছেন মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের দুই ছাত্রী। ২০১৮ সালে ছাত্রী মেস থেকে উঠিয়ে নরসিংদীর নিলুফার ভিলায় নিয়ে জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

ওই দুই ছাত্রীর মধ্যে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী খাদিজা পারভীন ওরফে মেঘনা থাকতেন মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেই একটি মেসে। অপর ছাত্রী ইসরাত জাহান ওরফে মৌসুমী ওরফে মৌ তার বাবা-মা ও ভাইদের সঙ্গে মিরপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।

স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে, সিটিটিসির লোকজন প্রথমে মেস থেকে মেঘনাকে তুলে নেয়। পরে মেঘনাকে দিয়ে অপর ছাত্রী মৌকে ডেকে নিয়ে নরসিংদীর নিলুফার ভিলায় নিয়ে জঙ্গি নাটক সাজায়।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মতে, ওই দুই ছাত্রীকে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সাজানো হয়। মূলত মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের ইসলামের প্রতি ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা রোধ করতে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টিই ছিল সেক্যুলার শেখ হাসিনা সরকারের উদ্দেশ্য।

আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে নরসিংদীর সেই জঙ্গি নাটকের কারিগর হিসেবে সিটিটিসির সাবেক দুই প্রধান পলাতক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ও মো. আসাদুজ্জামানের নাম উঠে এসেছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনিরুল ও আসাদুজ্জামান গা-ঢাকা দেন। ধারণা করা হচ্ছে, প্রাথমিকভাবে তারা ভারতে পালিয়ে গেছেন। যদিও তাদের পরবর্তী গন্তব্য সম্পর্কে কোনো তথ্য মেলেনি।

বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অতীতে তথাকথিত জঙ্গি নাটকের নামে অনেক নিরীহ তরুণকে নির্মমভাবে হত্যার অকাট্ট প্রমাণ রয়েছে। এছাড়া কুখ্যাত এ দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যায় জড়িত থাকার প্রমাণও রয়েছে।

শেখ হাসিনার আমলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নাটক সাজাতে সাধারণত জনমানবহীন এলাকা, মফস্বল শহর বা কোনো নির্জন গ্রামাঞ্চলকেই বেছে নিতেন এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের দলবল। আর তাদের পেছনের কুশীলব হিসেবে খোদ পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনা ছিল বলে জানা গেছে।

মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দুই ছাত্রী মনিরুল-আসাদুজ্জামানের সেই নীলনকশারই ‘বলি’ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীদের স্বজনরা।

দুই বান্ধবীর যোগসূত্র কোথায়?

খাদিজা পারভীন ওরফে মেঘনা শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানার পশ্চিম বেলতৈলা গ্রামের মো. খোরশেদ আলমের মেয়ে। তিনি বিবাহিত। তার স্বামীর নাম রাকিবুল হাসান। লেখাপড়ার কারণে মেঘনা মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আশুলিয়ার খাজান এলাকায় একটি মেসে ভাড়া থাকতেন।

মেঘনা ও তার বান্ধবী মৌ কী আসলেই মাধবদী পৌর এলাকার ছোট গদাইরচর (গাংপার) মহল্লার হাজী আফজাল হোসেনের মালিকানাধীন সাততলা বাড়িটিতে জঙ্গি আস্তানা গেড়েছিলেন? যদি সেখানে আস্তানাই থাকবে, তাহলে কতদিন ধরে সেই আস্তানায় ছিলেন তারা?

এমন প্রশ্নের জবাব পেতে মেঘনার বাবা মো. খোরশেদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করেন তিনি।

আমার দেশকে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে আশুলিয়ার খাজান এলাকায় একটি মেসে থাকত। সেখানে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেই মেস ছিল। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমার মেয়ে আমাকে ফোনে বলল, বাবা আমি বাড়ি যামু। আমাকে এক হাজার টাকা পাঠাও। আমি তাকে বেলা ৩টায় টাকা পাঠাই। সে ৩টা ১৪ মিনিটে টাকা তোলে। এরপর আর ফোন ধরে না। ২০১৮ সালের ৩ বা ৪ অক্টোবরের ঘটনা এটি।’

‘পরে সেই মেসে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, বিকালে বাজারে গেছিল, আর তো ফেরে নাই। পরদিন গেলাম সেখানে। দেখলাম তালা মারা। এরপর আর খোঁজ পাই নাই। কয়েক দিন পরে টিভিতে দেখলাম তারা নরসিংদীর সাততলা ভবন থেকে নামতাছে।’

আরও পড়ুনঃ  নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার সময় জানালেন সিইসি

এভাবেই সিটিটিসির জঙ্গি নাটকের নামে মেয়ের গ্রেপ্তারের ঘটনা জানান তিনি।

মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘অনেক মারধর করেছে ওরা (পুলিশ-সিটিটিসি)। মিথ্যা কেস দেয়া লাগবে তো! তার স্বামীকেও গ্রেপ্তার করেছিল। সে এখন জামিনে। তাদের কোনো সন্তান নাই।’

মেঘনাকে দিয়ে ডেকে তুলে নেয়া হয়েছিল বান্ধবী ইসরাত জাহান মৌকে। তার মা মাকসুদা রহমান জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, মেঘনা তার মেয়েকে ফোন করে ডেকে নেয়।

‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশনের’ বলি হলেন যেভাবে

সাজানো গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশনের’ মাধ্যমে ওই দুই তরুণীকে মিথ্যা অভিযোগে ২০১৬ সালে প্রথমে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছিল। সে মামলায় কয়েক মাস কারাগারে ছিলেন তারা। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর সিটিটিসির চোখ পড়ে তাদের ওপর।

আমেরিকা-ভারতের তথাকথিত ‘ওয়ার অন টেরর’ প্রজেক্টের ছায়ায় সিটিটিসির সদস্যরা ওই দুই তরুণীকে কুখ্যাত জঙ্গি হিসেবে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করে। আর এতেই বদলে যায় তাদের জীবন।

ইসরাত জাহানের বড় ভাই মোহাম্মদ সাইমুম হাসান আমার দেশকে বলেন, ‘আমার মা জামাতের রুকন। আমার বোন ছাত্রী সংস্থার সদস্য।’

এর আগে ২০১৬ সালে কেন মৌকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে সাইমুম বলেন, ‘গ্রুপ স্টাডির জন্য চার বান্ধবী আমাদের মিরপুরের বাসায় এসেছিল। পরে শুনি তাদের জঙ্গি হিসেবে ধইরা নিয়া গেছে। বাসা থেকে কিছু হাদিসের বই ও কোরআনের তর্জমা পাইছে। জামায়াতে ইসলামীর কিছু বইও পাইছে।’

নির্জন এলাকায় জঙ্গি নাটক যেভাবে মঞ্চস্থ হয়েছিল

২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর। মাধবদী পৌর এলাকার ছোট গদাইরচর (গাংপার) মহল্লার হাজী আফজাল হোসেনের মালিকানাধীন সাততলা একটি বাড়ি রাত সাড়ে ৮টা থেকে ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয় যে, ‘নিলুফার ভিলা’ নামের সেই বাড়িটি একটি ‘জঙ্গি আস্তানা’।

দিনভর বাড়িটি ঘিরে রেখে গণমাধ্যমে একটা টানটান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করেন সিটিটিসির তখনকার প্রধান মনিরুল ইসলাম। সে সময় আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন গণমাধ্যমও যাচাই-বাছাই না করেই পুলিশের বয়ান প্রচার করতে থাকে। এভাবে পেরিয়ে যায় ২৪ ঘণ্টা। এরপর একদম শান্ত পরিবেশেই বোরকা পরা অবস্থায় দুই ছাত্রীকে সেই ভবন থেকে বের করে একটি বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। অভিযানকালে পুরো এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সাধারণ লোকজনের যাতায়াত সীমিত রাখা হয়।

জঙ্গি নাটক’ জমজমাট করতে ১৭ অক্টোবর মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয়ে বলেন, ‘মাধবদীর ওই আস্তানা থেকে দুজনকে আত্মসমর্পণ করানো হয়েছে। যেহেতু তারা নারী, সেহেতু তাদের আত্মসমর্পণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছি এবং শেষ পর্যন্ত তারা আত্মসমর্পণ করেছে। যদিও তারা আজকে পুলিশকে লক্ষ করে বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করে এবং একটি বিস্ফোরণ করেছেও। তবে এতে কেউ আহত হয়নি।’

মনিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে বিস্ফোরণের দাবি করলেও মামলার চার্জশিট বলছে একদম ভিন্ন কথা।

চার্জশিটে বলা হয়, ‘এক পর্যায়ে উল্লিখিত জঙ্গিদ্বয় আত্মসমর্পণ করিলে ঘটনাস্থল হইতে উপরোক্ত জঙ্গিদ্বয়কে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। অতঃপর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট উক্ত জঙ্গিদ্বয়ের বাসায় তল্লাশিকালে বাসার দক্ষিণ-পশ্চিম রুমে ৩টি বোমাবিশিষ্ট একটি সুইসাইডাল ভেস্ট পায়। উক্ত সুইসাইডাল ভেস্টটি বোম্ব ডিসপোজাল কর্তৃপক্ষ নিস্ক্রিয় করে।’

আরও পড়ুনঃ  আরেকটি দানবকে সরকারে বসানোর জন্য শিক্ষার্থীরা জীবন দেয়নি: নুর

অর্থাৎ, পুলিশের তৈরি করা সাজানো চার্জশিটেই মনিরুলের দাবির সত্যতা মেলেনি।

এমনকি সেই ভবনের দারোয়ান, স্থানীয় একজন অধিবাসী এবং অভিযানে অংশ নেওয়া মাধবদী থানার (বর্তমানে বদলিকৃত) এক সাব-ইন্সপেক্টরের সাক্ষ্যেই মনিরুলের নির্লজ্জ মিথ্যা উন্মোচিত হয়েছে। তাদের সবাইকে মামলায় সাক্ষী বানিয়েছিল পুলিশ।

সেই বাড়ির তখনকার দারোয়ান আব্দুর রাজ্জাক (তখন বয়স ছিল ৬১) আদালতে সাক্ষীর জবানবন্দিতে বলেন, ‘….পুলিশ সদস্যরা মাইকে দরজা খোলার আহ্বান করিলে আসামিরা দরজা খুলিয়া বাহিরে আসে।’

মামলায় পুলিশের সাক্ষী এসআই সুবল চন্দ্র পাল ও স্থানীয় অধিবাসী মামলার আরেকজন মন্টু চন্দ্র শীল সাক্ষীর জবানবন্দিতে আত্মসমর্পণের একই ধরনের কাহিনি বর্ণনা করেন।

সেদিন মনিরুল আরও দাবি করেছিলেন, ‘আত্মসমর্পণ করা মৌসুমী আক্তার মৌ এবং খাদিজা আক্তার মেঘনা নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ধরা হয়েছে। আত্মসমর্পণ করা দুই নারী জঙ্গি আগে থেকেই জঙ্গিবাদে জড়িত। এ অভিযোগে ২০১৬ সালে তারা র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ৭/৮ মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আবারও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। জেল থেকে বের হওয়ার পর তারা কেউ নিজেদের বাসায় ফিরে যায়নি।’

মনিরুলের এমন দাবির বিষয় নাকচ করেন দুই তরুণীর স্বজনরা।

তারা জানান, ভুক্তভোগী ছাত্রীরা ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে চলায় এবং পরিবারের সদস্য জামায়াতের সদস্য হওয়ায় প্রথম দিকে র‌্যাবের ষড়যন্ত্রের শিকার হন। পরবর্তীতে জামিনের পর সিটিটিসি এ বিষয়টিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে নতুন করে জঙ্গি নাটকের গল্প সাজায়।

এ বিষয়ে র‌্যাবের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ওই দুই শিক্ষার্থী কতটা ভয়ংকর?

পুলিশের দাবি, সেই আস্তানায় একটি কফি কালারের ব্যাগ প্যাকের পাঁচ টুকরো উদ্ধার করা হয়। এছাড়া সুইসাইডাল ভেস্টের তিন টুকরো জব্দের দাবিও করেছিল পুলিশ। পাশাপাশি বেগুনি রঙের কাপড়ের অংশ, যা দিয়ে নাকি সুইসাইডাল ভেস্ট প্যাঁচানো ছিল। এসব নিষ্ক্রিয় করার পর ওই কাপড় পুড়ে যায়। ঘরে পাঁচটি ছোট ছোট টাইলসের টুকরোও জব্দ করে। বোমা নিষ্ক্রিয় করার পর নাকি রুমের টাইলস ভেঙে যায়।

এছাড়া ওই কক্ষ থেকে ‘হিসনুল মুসলিম দৈনিক জিকর ও দুয়ার ভাণ্ডার’ নামে একটি বই এবং কোরআনের তর্জমা উদ্ধার করে তাদের ভয়ংকর জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করে পুলিশ।

চার্জশিটে সুইসাইডাল ভেস্ট জব্দের কথা বলা হলেও আদালতে তা দেখাতে পারেনি বলে আমার দেশকে টেলিফোনে জানিয়েছেন ইসরাত জাহান মৌ-এর আইনজীবী লোকমান হোসেন।

গত ৯ ডিসেম্বর আমার দেশকে তিনি বলেন, ‘পুলিশ সুইসাইডাল ভেস্টের যে কথা আলামত হিসেবে বলেছিল, সেসব আদালতে দেখাতে পারেনি।’

ওইদিনের জঙ্গি নাটক শেষে বেশ কজন সাধারণ নাগরিককে সাক্ষী হিসেবে দেখিয়েছিল পুলিশ। সে বিষয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘বেশিরভাগ সাক্ষী হয়ে গেছে (সাক্ষ্য শেষ)। সাধারণ সাক্ষীরা আদালতে বলেছে যে তারা ফোর্সের (পুলিশ-সিটিটিসি) সাথে (ঘটনাস্থলে) গিয়েছিল।’

অভিযানকালে ১৪৪ ধারা জারি করে সাধারণ লোকজনের সমাগমে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও এসব ‘রহস্যজনক’ সাক্ষী ঠিকই ফোর্সের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন এবং পুলিশের কথা অনুযায়ী জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর করেছিলেন বলে তাদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে।

সেই মামলায় পুলিশ এখন কী বলছে

মামলার অন্যতম সাক্ষী করা হয়েছিল মাধবদী থানার এসআই (নি.) মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে।

আরও পড়ুনঃ  প্রধান উপদেষ্টার সাথে সংলাপ শেষে যা বলল বিএনপি

গত ১১ ডিসেম্বর টেলিফোনে তার সঙ্গে কথা হয়- আপনি কী এখনও মাধবদী থানায় আছেন?

-‘না ভাই, সেখানে অনেক আগে ছিলাম। এখন টাঙ্গাইল, শফিপুরে আছি।’

আপনার কী প্রমোশন হয়েছে?

-‘না, আগের পদেই আছি।’

আপনি যখন নরসিংদীতে ছিলেন, তখন নিলুফার ভিলা থেকে জেএমবি সন্দেহে দুই ছাত্রীকে ধরেছিলেন। মনে আছে আপনার? এমন প্রশ্নে কিছুক্ষণ চুপ থাকেন তিনি।

একই প্রশ্ন আবার করা হলে তিনি বলেন, ‘না না না, আমার মনে নাই।’

তাহলে আপনি কী মাধবদী থানায় ছিলেন না?

-‘হ্যাঁ হ্যাঁ (মাধবদী থানায়) ছিলাম।’

মামলার কাগজে তো সাক্ষী হিসেবে আপনার নাম, পদবি এবং যে ফোন নম্বরে আপনাকে এখন আমি ফোন করলাম, সেই ফোন নম্বর লেখা।

এবার তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ‘হ্যাঁ, হতে পারে। ফোর্সের সাথে হয়তো গেছিলাম।’

আপনার তাহলে মনে নেই বিষয়টি, তাই তো?

-(হেসে বললেন) ‘হ্যাঁ, মনে নাই।’

বড় ঘটনা হলে তো মনে থাকার কথা, ঠিক না?

‘জ্বি।’

দুই ছাত্রীকে নিয়ে সিটিটিসির নতুন নাটক

শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গত ১৯ জুলাই নরসিংদী কারাগারে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে কারাগারে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে মেঘনা ও মৌসহ অনেক নারী হাজতিকে নিরাপত্তার কারণে বের করে দিয়েছিলেন সেখানকার জেল সুপার।

এমনকি এসব নারী হাজতির স্বজনদের কাছে টেলিফোনও করা হয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় তারা নিজেরাই প্রশাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

মেঘনার বাবা খোরশেদ আলম বলেন, ‘জেলারের সঙ্গে ফোনে আমার কথা হইছে। জেল সুপার বলেছিলেন জেলখানা পোড়া। মেয়ে রাখা যাবে না।’

অথচ আত্মসমর্পণের পর গণমাধ্যমের সামনে সেই ছাত্রীদের হাজির করে তখনকার সিটিটিসি প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, ‘নয়জন জঙ্গির মধ্যে এই দুজন ছিল আমাদের তথ্যমতে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর। তারা যেভাবে অস্ত্রাগার ভেঙে অস্ত্র লুট করেছে, ঠিক তেমনিভাবে জঙ্গিদের সেলে গিয়ে জঙ্গিদের তালা ভেঙে তাদের বের করে এনেছে। এর পেছনের শক্তিকেও শনাক্তের প্রচেষ্টায় আমরা আছি।’

সিটিটিসির মো. আসাদুজ্জামানের এমন দাবি খণ্ডন করে খোরশেদ আলম বলেন, “তারা আমাদের ও দুই ছাত্রীকে ভয় দেখিয়ে বলে ‘তোমরা জেল ভেঙে পালিয়েছ’ এটা বলো।”

তিনি বলেন, ‘আসাদুজ্জামান ওদেরকে মারধর করছে। আরও দুইটা কেস দিয়া কাশিমপুরে পাঠায়। আসাদুজ্জামান জঙ্গি নাটক বানাইছে। ডিবির হারুনও জড়িত। মনিরুলও জড়িত। অতীতে তারা এসব করে কোটি কোটি টাকা কামাইছে।’

ইসরাত জাহানের বড় ভাই সাইমুম হাসানও একই তথ্য দেন। তিনি বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল। জেলার আমাকে বলেছিলেন নিরাপত্তার কারণেই সে সময় তাদেরকে জেলখানা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।’

সাইমুম আরও বলেন, ‘আমার বাবা স্ট্রোকের রোগী, তাকে নিয়েই আমি অ্যাম্বুলেন্সে কইরা তাকে (ইসরাত) নরসিংদী কারাগার থেকে নিয়া আসছি। এরপর আমরা কারা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু পরদিনই ডিবি অফিস থেকে আমাদের বাসায় লোক আসে। এখানে জঙ্গি আছে বইলা তারা আসে। ধইরা নিয়া সারা দেশে মিডিয়াতে প্রচার করেছে।’

নিলুফার ভিলা জঙ্গি নাটকের বিষয়ে বর্তমান সরকার তদন্তের উদ্যোগ নিলে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশের পাশাপাশি মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীর জীবন নতুনভাবে শুরু করার সুযোগ হতে পারে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ